সাজা শেষ হলেও আগামী বছর পর্যন্ত কারাগারেই থাকছেন অ্যাসাঞ্জ

672

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিকল্পধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের কারাগারে থাকতে হচ্ছে। জামিনের শর্ত ভঙ্গের দায়ে সাজা ভোগের পর ২২ সেপ্টেম্বর তার মুক্তি পাওয়া কথা ছিল। কিন্তু সরকারি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাকের ষড়যন্ত্রসহ ১৮টি অভিযোগে অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যেতে চায় ওয়াশিংটন। এই প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার রুল জারি করেছেন বিচারক।

২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গত ১১ এপ্রিল রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। যুক্তরাজ্য জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুরোধ সাপেক্ষেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১ এপ্রিল তাকে জামিনের শর্ত ভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিটিশ আদালত। তখন থেকে বেলমার্শ নামক ‘যুক্তরাজ্যের গুয়ানতানামো বে’ নামে পরিচিত কুখ্যাত কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। ১ মে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ৫০ সপ্তাহের সাজা ঘোষণা করা হয়। আর তার একদিন পরই (২ মে) যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে শুনানি শুরু করে ব্রিটিশ আদালত। ওই ৫০ সপ্তাহের সাজা ২২ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে। তিনি পালিয়ে যেতে পারেন এ আশঙ্কায় শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ওয়েস্টমিনিস্টারের বিচারক তাকে আগামী বছর প্রত্যর্পণের ওই মামলার শুনানি পর্যন্ত কারাগারে রাখার রুল জারি করেন।

বিচারক ভ্যানিসা বারইটসার শুক্রবার অ্যাসাঞ্জকে বলেন, ‘আজ আপনাকে হাজির করা হয়েছে কারণ আপনার সাজার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এখন আপনার অবস্থানের পরিবর্তন হবে। আপনি কয়েদি থেকে প্রত্যর্পণ মামলায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।’

ভ্যানিসা আরও বলেন, আপনার আইনজীবী আপনার জামিনের জন্য আবেদন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আপনার পালিয়ে যাওয়ার পূর্ববর্তী নজির থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আমার বিবেচনায় আমার বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে যে, আমি আপনাকে মুক্তি দিলে, আবারও আপনি পালিয়ে যাবেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকারের কাছে অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক আবেদন করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাভিদ জানান, অ্যাসাঞ্জকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে এক অনুমতিপত্রে সই করেছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ব্রিটিশ আদালত। ওই চুক্তির পর প্রত্যর্পণ মামলার পূর্ণ শুনানি শুরু হবে আগামী বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি। একারণে তাকে সেই পর্যন্ত কারাগারে রাখতে রুল দেন বিচারক।

যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই বলে আসছে, দেশটির ইতিহাসে গোপন তথ্য ফাঁসের অন্যতম বড় ঘটনায় অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় ওয়াশিংটন। এজন্য তার প্রত্যর্পণ চায় তারা। তবে এ সব অভিযোগ বরবারই অ্যাসাঞ্জ অস্বীকার করে আসছেন।

২০১০ সালে উইকিলিকসে ইরাক ও আফগানিস্তান বিষয়ক লাখ লাখ নথি ফাঁসের ঘটনায় অ্যাসাঞ্জের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে বিচারের মুখোমুখি করতে চান মার্কিন প্রসিকিউটররা। তার বিরুদ্ধে মোট ১৮টি অভিযোগ আনতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অ্যাসাঞ্জ ও তার সমর্থকেরা বলছেন, সরকারি নথি ফাঁসের ঘটনায় অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করা হলে তা সংবাদ সংগ্রহকে অপরাধ বানিয়ে দেবে। আর সাংবাদিকদের কাজকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংয়ের সঙ্গে যোগসাজশে মার্কিন সরকারের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করেন অ্যাসাঞ্জ। ওই অপরাধে ম্যানিংয়ের ৩৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়াদ শেষের আগে তার সাজার মেয়াদ মওকুফ করলে সাত বছর পর মুক্তি পান ম্যানিং। তবে পরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে আবারও কারাগারে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।